• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৮ ঘন্টা আগে

তিস্তার বুকে ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র স্বপ্নযাত্রা শুরু



সায়েম শান্ত►

উত্তর জনপদে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা শেষে অবশেষে খুলে গেল স্বপ্নের দুয়ার। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন হয়েছে। এতে আনন্দে ভাসছে দুই পারের মানুষ।

আজ (বুধবার, ২০ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১টার দিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাকে সংযুক্ত করা এই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি), এশিয়া অপারেশনের মহাপরিচালক ড. সাঈদ আউদ আলশামারিসহ এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তবে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই গাইবান্ধা প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে ও মোটরসাইকেলে সেতু পার হতে শুরু করেন। উৎসুক জনতার উৎসাহ ও উচ্ছ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে কোনও বাধা ছাড়াই সেতু পারাপার উন্মুক্ত রাখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে দুই প্রান্ত থেকেই হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর সেতু পার হয়ে উদ্বোধনী দিনটি উপভোগ করে।

উদ্বোধনের পর হরিপুর অংশের প্রবেশমুখে ফিতা কেটে সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই হাজারো মানুষ দলে দলে সেতুতে উঠে পড়েন। তারা সেতুর ওপর দলবেঁধে ছবি ওঠাতে থাকেন এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাস করতে থাকেন। এসময় উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে করমর্দন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এলজিইডি কর্মকর্তা, সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং উপদেষ্টার সফর সঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উদ্বোধনের আগে থেকেই সেতু এলাকায় তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে তিস্তাপাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন দুই জেলার হাজারো মানুষ। কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউবা দল বেঁধে আসেন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এই আনন্দে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস।

হরিপুর এলাকার কলেজশিক্ষক প্রভাত চন্দ্র পাল জানান, “সেতুটির নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ দেওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। একজন বিখ্যাত মানুষের নামে সেতুটি হওয়ায় আমরা গর্বিত।” তিনি বলেন, “এই সেতু হয়ে উঠবে তিস্তাপাড়ের মানুষের যোগাযোগ, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন।”

২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতা ও একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর চালু হলো এই সেতু।

এলজিইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। এটি একটি প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতু। ৩১টি স্প্যান নিয়ে নির্মিত সেতুটির লেন সংখ্যা ২টি। সেতুটির মাধ্যমে তিস্তার দুই তীরে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার এলাকাসহ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন হলো।

সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে। গড়ে উঠবে ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা। ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০-১০০ কিলোমিটার। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।