• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২-৭-২০২৩, সময়ঃ সকাল ১১:১৬

আঠা ফল বওলা



কঙ্কন সরকার ►

আজকের মত গাম, সুপার গ্লু, আইকা আঠা পাওয়া কিছুদিন আগেও সহজ ছিল না। তখন আঠার কাজে ব্যবহারে বওলা গোটার আঠা চাহিদা পূরণ করতো অনেকাংশে। যাহোক, গ্রামে যাদের বেড়ে ওঠা তারা কমবেশি বওলা আঠার সাথে পরিচিত। এখনো জ্যৈষ্ঠ -আষাঢ়ে গাঁয়ের পথে চলতে কিংবা ঝোপ জঙ্গলে হালকা গোলাপি রঙের ছোট ছোট জ্বলজ্বলে ঝোপা ঝোপা পাকা ফলওয়ালা গাছ চোখে পড়ে। অন্য গাছপালার মাঝে সহজেই চিনে নেওয়া যায় যে এটি বওলার গাছ। তবে আজ এ গাছ বিলুপ্তির পথে। বওলা মাঝারি ধরনের পত্রঝরা বৃক্ষ। 

বওলার বাকল ধূসর বাদামী বর্ণের এবং অণুদৈর্ঘ্য এবং উল্লম্ব ফাটলযুক্ত। মার্চ-এপ্রিল মাসে বওলা গাছে ফুল ফোটে। বেশিরভাগ পুষ্পমঞ্জরি সাদা রঙের। মে-জুনের দিকে ফল দেখা যায়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। পাকা ফল হালকা ফ্যাকাশে থেকে বাদামি ও গোলাপি রঙের। মিউকিলেজের মতো আঠালো আঠা দিয়ে পূর্ণ হওয়ায় সজ্জা কিছুটা স্বচ্ছ হয়। সম্পূর্ণ পাকা হয়ে গেলে স্বাদযুক্ত রসালো পদার্থই হয়ে ওঠে আঠা। 

এই আঠা দিয়ে বই, খাতার মলাট বাঁধা, ছেঁড়া পাতা জোড়া দেওয়া, চিঠির খাম আটকানো, ঘুড়ির কাগজ লাগানো ও বানানো, বেড়ায় পেপার বা কাগজ লাগানোতে ব্যবহার হতো৷ অফিসের কাজেও কাগজের আঠার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
এর ফল হরিতাল, বুলবুলি, কোকিল, গোবরে শালিকের প্রিয় খাবার। তবে পাকা বওলা গোটা

ছোটরাও খায়। কেউ কেউ ফলের বীজের শাঁসটা খায়। বওলার নাকি ভেষজ গুণও আছে। এর শাঁস চর্মরোগে কাজে লাগে। বাকলের ক্বাথ টনিক হিসেবে অজীর্ণ, উদরাময়, জ্বর ও পেটের অসুখে কার্যকর। কাঠ তেমন শক্ত না হলেও বয়সি গাছের কাঠ দিয়ে নৌকা, বন্দুকের কুঁদা, কৃষি যন্ত্রপাতি ও ছোটখাটো আসবাব তৈরি করা যায়। তাজা পাতাগুলি গবাদি পশুদের জন্য খাদ্য হিসাবে বেশ উপযোগী। বওলার আঠা বিড়ি এবং চুরুট মোড়ানোর জন্যও ব্যবহৃত হত। বওলার আরো বেশ কিছু নাম আছে, যেমন— বউলা, বহালা, বল্লার আঠা, গাম ফল, বোহাল/বহাল, বোহারি/বহারি, আঠা ফল, বল্লার গোটা, লাডা ফল, বহুবরা বা লারহোরা নামেও পরিচিত।