- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২০-৭-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:২০
গাইবান্ধায় বাড়ছে ভুয়া পশু চিকিৎসকদের দৌরাত্ম
নিজস্ব প্রতিবেদক►
গাইবান্ধা জেলাজুড়ে দীর্ঘ হচ্ছে নিবন্ধনহীন ভুয়া পশু চিকিৎসকদের মিছিল। এঁদের অনেকেরই বিরুদ্ধে রয়েছে নিবন্ধনহীন কোম্পানির ওষুধ বিক্রির অভিযোগও। তা ছাড়া পশুর জন্য অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এতে একদিকে হুমকিতে পড়েছে পশু স্বাস্থ্যসেবা, অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছেন খামারিরা।
জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জেলাজুড়ে ছোট-বড় কয়েক শতাধিক গরু-ছাগল এবং হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। এসব খামারকে টার্গেট করে নিবন্ধন ছাড়াই নামধারী পশু চিকিৎসকরা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। কয়েকদিনের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের কেউ কেউ ফার্মেসিও দিয়েছেন।
যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। বড় বড় সাইনবোর্ডে দেখা মেলে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকদের নাম। তাঁদের কেউ কেউ প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ বা ‘ডাঃ’ পদবীও ব্যবহার করছেন। যা প্রাণী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন।
এমনই এক পল্লী পশু চিকিৎসকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম তার মো. আব্দুল আলিম। তিনি জানান, ২০০২ সালে রংপুরের যুব উন্নয়ন থেকে তিন মাসের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা এবং মৎস্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন।
পরে সাঘাটার জুমারবাড়ী বাজারে চেম্বার খুলে পশু চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তার চেম্বারের সাইনবোর্ডেও দেখা মেলে ‘ডাঃ’ পদবী। তার মতোই কয়েকদিনের প্রাথমিক প্রাণী চিকিৎসাসেবার প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাঃ পদবী ব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ২০১৯ সালের আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী, নিবন্ধন ও সনদ ছাড়া কেউ পশু চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না। একই আইনের ৩৫ ধারায় আইন অমান্যকারীকে তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদÐ এবং দুই লাখ জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ আইনকে উপেক্ষা করে নিবন্ধন ছাড়াই জেলার সাত উপজেলার কয়েক শতাধিক নামধারী চিকিৎসক বিভিন্ন এলাকায় প্রাণি চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব ছালুয়া গ্রামের খামারি খাজা মিয়া বলেন, এ মাসের শুরুতে আমার একটি গরু অসুস্থ হয়। চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে বলার পরেও কেউ দেখতে আসেননি। পরে বাধ্য হয়ে পল্লী পশু চিকিৎসককে দেখাই। তিনি যে ওষুধ দেন, তা খাওয়ানো শুরু করি। কিন্তু দুই দিন পরই গরুটি মারা যায়। শুধু খামারি খাজা মিয়াই নন তার মতো একই অবস্থা জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন খামারির।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খামারি মহব্বত হোসেন সর্দার জানান, তাঁর খামারে ১৫টি গরু-ছাগল রয়েছে। পশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের সময়মতো পাওয়া যায় না। তাই যখনই গরু-ছাগল অসুস্থ হয়, তখন এলাকার এক পশু চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। তিনি আরও বলেন, ‘ওই চিকিৎসকের নিবন্ধন কিংবা ভেটেরিনারি সনদ আছে কি না, তা আমার জানা নাই।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মাছুদার রহমান সরকার জানান, জেলার সাত উপজেলায় কতজন পশু চিকিৎসক আছেন, সে তথ্য তার কাছে নেই। তবে খুব শীঘ্রই এইসব ভুয়া পশু চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।