• মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২৬ মিনিট আগে

বাল্যবিবাহ বন্ধে ফুলছড়িতে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘সম্ভাবনার উৎসব’



আমিনুল হক, ফুলছড়ি►

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বাল্যবিবাহ বন্ধে পদক্ষেপ তরান্বিত করার লক্ষে কিশোর-কিশোরী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে সম্ভাবনার উৎসব (ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই উৎসবে বাল্যবিবাহ না করে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন শিক্ষার্থীরা।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ উৎসব চলে। উপজেলার বুড়াইল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও ইউএনএফপিএ’র যৌথ উদ্যোগে একশন এইড বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায় এসকেএস ফাউন্ডেশনের অ্যাক্সেলারেটিং অ্যাকশন টু ইন্ড চাইন্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ (ফেইজ টু) প্রকল্পের আওতায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। 

স্থানীয় তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সূধীবৃন্দ ও আয়োজকদের পদচারণায় মুখরিত হয় সম্ভাবনার উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসবে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য ও পশুপালন, ব্যবসা ও স্বাধীন কর্মসংস্থান (ফ্রিল্যান্সিং), আইন ও বিচার, ক্রীড়া, ব্যাংক ও বীমা, সাংবাদিকতা ও কন্টেন্ট ক্রিয়েশন খাতের নারী পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে বাল্যবিবাহের কুফল ও সফল মানুষ হওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে বাস্তব তথ্য, কর্মজীবনের নির্দেশনা এবং প্রেরণাদায়ক গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়। ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ না করে সফল মানুষ হওয়ার অঙ্গীকার করেন তারা। উৎসব চলাকালে বিদেশি প্রতিনিধিরা স্টলগুলো ঘুরে দেখেন ও তাদের অভিজ্ঞতা বিনিমিয় করেন। 

অনুষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সফল মানুষ হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এতে বক্তব্য দেন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের বাংলাদেশের ফার্স্ট সেক্রেটারি (হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যান্ড জেন্ডার) ইয়ান সুইলেস, সিনিয়র ফিনান্সিয়াল এডভাইজার বার্ট ইসিং, সিনিয়র পলিসি এডভাইজার মাশফিকা জামান সাটিয়ার, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ চিফ (এডলোসেন্স এন্ড ইয়ুথ)  ইলিজা আজরেই, একশন এইড বাংলাদেশের সিনিয়র অফিসার এ.জেড.এম. মৌসুম ইসলাম, এসকেএস ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) খন্দকার জাহিদ সারোয়ার সোহেল, কো-অর্ডিনেটর (ফিল্ড অপারেশন) বাহরাম খান, ফুলছড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তাজমিরা আক্তার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আঁখি সরকার, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার নূরে আলম সিদ্দিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন ডা. রুবিনা আফরোজ, এডভোকেট সানজিদা আক্তার, নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা আক্তার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিফতাহুল জান্নাত, গাইবান্ধা জেলা নারী ফুটবল দলের সদস্য সুবর্ণা আক্তার প্রমুখ। 

উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ড্রিম ওয়াল ও কুইজ প্রতিযোগিতা। ড্রিম ওয়ালে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও পেশাগত আকাঙ্খা লেখেন। অপরদিকে কুইজ প্রতিযোগিতায় কিশোর-কিশোরীরা জেন্ডার, এসআরএইচআর (যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার) এবং জিবিভি (নারীর প্রতি সহিংসতা) সম্পর্কিত বিষয়ে নতুন ধারণা লাভ করে। পরে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

ছালুয়া ফজলে রাব্বি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কলি আক্তার বলেন, এ ধরনের উৎসবে আসার সুযোগ আমাদের খুবই কম। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। বাল্যবিবাহের যেসব ক্ষতিকর দিক এবং বাল্যবিবাহ কীভাবে একটি মেয়ে ও তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় সে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তা ছাড়া মাধ্যমিক শেষ করার পরে উচ্চ শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছি। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, আমার বন্ধুদেরও বিষয়টি জানাতে পারব।

নিজের মেয়েকে নিয়ে আসা সেলিম মিয়া নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের বিয়ের জন্য এখনই অনেকে প্রস্তাব আসছে। এখানে এসে মেয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা পেলাম। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সব ধরনের চেষ্টা করার অঙ্গীকার করেন এই অভিভাবক।

ফুলছড়ি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিবাহে ঝুঁকিপূর্ণ সারা দেশে মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলা অন্যতম। ফুলছড়িতে প্রথমবারের এই উৎসব বাল্যবিবাহ বন্ধে এ আয়োজন অনেক কাজে দিবে।