- মাধুকর প্রতিনিধি
- এই মাত্র
৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ
মাধুকর ডেস্ক►
মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে আগামী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়কে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ পরিচালনা করা হবে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং মৎস্যজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আশ্বিনী পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন ও অমাবস্যার পরের ৩ দিনসহ মোট ২২ দিন এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে দু’টি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজননের সুযোগ রাখা হয়েছে।’
এ সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ এবং জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলারের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হবে। অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।
জেলেদের সহায়তায় সরকার ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ করা হবে। পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি করে চাল, যা দিতে মোট ১৫ হাজার ৫০৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পেরেছে। এর ফলে প্রায় ৪৪ হাজার ২৫০ কোটি জাটকা (রেণু ইলিশ) উৎপন্ন হয়েছে, যা ভবিষ্যতে পরিণত ইলিশে রূপ নেবে।
গত ৫ বছরে ইলিশ আহরণ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ইলিশ আহরণের হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে জাটকা আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির আশা থাকলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ হারে আহরণ কমেছে। এই দুই মাসে মোট আহরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম।
রপ্তানি পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে ৩৫২ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে অনুমোদিত রপ্তানির তুলনায় প্রকৃত রপ্তানির হার ক্রমাগত কমেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদন ও রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন, আয় হয় ১৫৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে অনুমোদন ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন, রপ্তানি ১ হাজার ২১১ মেট্রিক টন, আয় ১১৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে অনুমোদন ৩ হাজার মেট্রিক টন, রপ্তানি ১ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন, আয় ১৪৮ কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুমোদন ছিল ৩ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন, কিন্তু রপ্তানি হয় মাত্র ৬৬৫ মেট্রিক টন, আয় ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনুমোদন ছিল ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ৫৭৪ মেট্রিক টন, যার মূল্য ৬৮ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, যার রপ্তানি কার্যক্রম এখনো চলমান।
বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২ দশমিক ৫০ ডলার (প্রতি ডলার ১২১ দশমিক ৭২ টাকা ধরে)। এই হিসাবে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত ৮১ হাজার ৪৩৮ কেজি ইলিশের বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১২ কোটি ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৯১৭ টাকা। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত ২২ দশমিক ২৬ মেট্রিক টনের বাজার মূল্য ৩ কোটি ৩৮ হাজার ১৫৪ টাকা।
মা ইলিশ সংরক্ষণের এই সরকারি উদ্যোগকে উপদেষ্টা দীর্ঘমেয়াদি ফলদায়ক পরিকল্পনা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলে দেশের ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও সৃষ্টি হবে।—বাসস